বিশেষ প্রতিনিধি, Al Masud Nayon।।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত শনিবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ভারত–পাকিস্তান। এরপরই আইপিএল আবারও মাঠে ফেরাতে তোড়জোড় শুরু করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। সব ঠিক থাকলে থাকলে আগামী শুক্র বা শনিবার থেকে আইপিএলের বাকি অংশ মাঠে গড়ানোর কথা।
যদিও বেশির ভাগ বিদেশি খেলোয়াড় আতঙ্কে ভারত ছেড়েছেন। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো অবশ্য তাঁদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফিরে আসতে বলেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বার্তা সংস্থা এএপির দাবি, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা আইপিএল খেলতে এ বছর আর ভারতে যেতে চান না।
২০২৫ আইপিএল খেলতে মোট ১৫ জন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ভারতে গিয়েছিলেন—মিচেল স্টার্ক, জেইক ফ্রেজার–ম্যাগার্ক (দিল্লি ক্যাপিটালস), জশ হ্যাজলউড, টিম ডেভিড (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, জশ ইংলিস, অ্যারন হার্ডি, জাভিয়ের বার্টলেট (পাঞ্জাব কিংস), প্যাট কামিন্স, ট্রাভিস হেড, অ্যাডাম জাম্পা (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ), স্পেন্সার জনসন (কলকাতা নাইট রাইডার্স), মিচেল মার্শ (লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস) ও নাথান এলিস (চেন্নাই সুপার কিংস)।
তাঁদের মধ্যে চোটের কারণে আইপিএল থেকে ছিটকে পড়ায় ম্যাক্সওয়েল আগেই অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গেছেন। ভারত–পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে টুর্নামেন্ট স্থগিতের ঘোষণা আসার পর বাকিরাও ভারত ছেড়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের বেশির ভাগই এবার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আইপিএল খেলতে গিয়েছিলেন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের সামরিক বাহিনীর একের পর এক মিসাইল ও ড্রোন হামলার খবর পরিবারের সদস্যদের কানে পৌঁছানোয় তাঁরা একটু বেশিই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাই পরের ফ্লাইটেই ভারত ত্যাগ করেন।
দিল্লি ক্যাপিটালসের ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ককে যেমন গতকাল ক্রিকেটার স্ত্রী অ্যালিসা হিলির সঙ্গে সিডনি বিমানবন্দরে দেখা গেছে। এ সময় স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স্টার্ক ও হিলির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা এড়িয়ে যান। প্যাট কামিন্স–ট্রাভিস হেডরাও পরিবার নিয়ে দেশে ফিরেছেন।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জশ হ্যাজলউড এই মাসে কোনো ম্যাচই খেলেননি। এই তারকা পেসারের না খেলার কারণ পিঠের চোট। সেই চোট নিয়েই দেশে ফিরে গেছেন তিনি। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর দাবি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হ্যাজলউড যদি পুরোপুরি সেরেও ওঠেন, তবু এ বছর আইপিএলে আর খেলবেন না।
একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এএপি জানিয়েছে, শুধু খেলোয়াড়েরাই নন; আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কোচিং স্টাফে থাকা অস্ট্রেলিয়ানরাও আর ভারতে যেতে চান না।
রিকি পন্টিং এবার পাঞ্জাব কিংসের প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর সহকারী হিসেবে দেখা গেছে ব্র্যাড হ্যাডিন ও জেমস হোপসকে। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের প্রধান কোচ ছিলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। মাইকেল হাসি চেন্নাই সুপার কিংসের ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আইপিএল স্থগিত হওয়ার পর ল্যাঙ্গার ও হাসি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গেছেন। তবে পন্টিং, হ্যাডিন ও হোপস এখনো ভারতেই আছেন।
এ বছর আইপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৫ মে। খেলোয়াড়দের এই দিন পর্যন্ত অনাপত্তিপত্র দিয়েছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইপিএল শেষ হতে পারে ৩০ মে থেকে ১ জুনের মধ্যে।
এএপির দাবি, স্টার্ক–কামিন্সদের বাড়তি এক সপ্তাহ ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি সিএ বিবেচনা করবে না। কারণ, লর্ডসে আগামী ১১–১৫ জুন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে জুনের শুরু থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দেবে তারা। আর প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন দল লন্ডনে পা রাখবে জুনের প্রথম সপ্তাহে।
কামিন্স–হেডদের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এরই মধ্যে আইপিএল প্লে–অফের লড়াই থেকে ছিটকে পড়েছে। দলটির বাকি থাকা তিন ম্যাচ নিছক আনুষ্ঠানিকতার। তাই শেষ তিনটি ম্যাচ খেলতে আবারও কামিন্স–হেডরা ভারতে যেতে চাইছেন না।
এই দুজনের মতো স্টার্ক–হ্যাজলউডও অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের স্কোয়াডে রাখা হতে পারে পাঞ্জাব কিংসের জশ ইংলিস কিংবা লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের মিচেল মার্শকে। দলে জায়গা পেলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের আইপিএল–ভাবনা থেকে সরে আসতে হবে।
তবে যাঁরা সিএর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের পরিকল্পনায় নেই (যেমন মার্কাস স্টয়নিস, অ্যাডাম জাম্পা, জাভিয়ের বার্টলেট, টিম ডেভিড), তাঁরা চাইলে আইপিএল খেলতে আবার ভারতে যেতেও পারেন।
এখন প্রশ্ন হলো—মৌসুম শেষ হওয়ার আগে আইপিএল ছেড়ে যাওয়ায় ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকেরা কি অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের পুরো পারিশ্রমিক দেবেন? এ নিয়ে একটা দ্বিধা তৈরি হয়েছে।
কারণ, অতীতে মৌসুমের মাঝপথে বিদেশিরা আইপিএল ছেড়েছেন বলে এবারের মেগা নিলামের আগে পুরো মৌসুম খেলার নিশ্চয়তা নিয়েই খেলোয়াড়দের নিবন্ধিত করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী খেলোয়াড়েরাও নিজ নিজ বোর্ড থেকে পুরো মৌসুম খেলার ছাড়পত্র নিয়েছিলেন।
তবে বর্তমান পরিস্থিতির দায় যেহেতু ক্রিকেটার বা তাঁর বোর্ডের নয়, বিসিসিআই–ই হয়তো খেলোয়াড়দের আরও এক সপ্তাহের জন্য ছাড়পত্রের অনুরোধ করতে পারে। এমনিতে চুক্তি অনুযায়ী, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে স্টার্ক–কামিন্সদের পুরো পারিশ্রমিকই দিতে হবে।