বিশেষ প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি।।
‘পুশইন’-এর অপেক্ষায় লালমনিরহাট সীমান্তের ওপারে কয়েক হাজার মানুষের দীর্ঘ লাইন। সীমান্তে ওপারে জড়ো রেখেছে বিএসএফ। রাতের আঁধারে এপারে ঠেলে দেয়ার আপেক্ষায়। খণ্ড খণ্ড করে বিভিন্ন সীমান্তে পুশইনের পরিকল্পনা বিএসএফ’র। সীমান্তের ওপারের গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া গেট দিয়ে বিএসএফ রাতের আঁধারে ঠেলে দিচ্ছে এপারে। লালমনিরহাট জেলার ২৮৪ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে সতর্ক রয়েছে বিজিবি। পুশইন ঠেকাতে সীমান্তে গ্রামবাসীরাও কাটাচ্ছে নির্ঘুম রাত। বিএসএফ রাতের আঁধারে দুদিনে ৪৪ জনকে করেছে পুশইন। বাকিরা রয়েছে অপেক্ষায়। পুশইনদের রোগ নির্ণয় ছাড়াই পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছে পুলিশ। জানা গেছে, দাদালদের মাধ্যমে কাজের সন্ধানে ভারতে যায় এরা। বিজিবি-পুলিশ জানিয়েছে, রহিঙ্গা শনাক্ত হলে পাঠানো হবে রহিঙ্গা ক্যাম্পে। পুশইন বাংলাদেশিরা জানিয়েছে, তাদের মতে ৪ হাজারের বেশি মানুষ সীমান্তের ওপারে। তাদের খণ্ড খণ্ডভাবে জড়ো রেখেছে বিএসএফ। সীমান্তের ওপারের গ্রামবাসীরাও জানিয়েছে একই তথ্য। গোয়েন্দা সদস্যরাও জানান একই তথ্য। বিজিবি ও পুলিশ জানায়, ভোর রাতে সীমান্ত গ্রামবাসীরা যখন ঘুমিয়ে পড়ে বিএসএফ রাতের আঁধারে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম ধবলসূতি গাটিয়ারভিটে ও ঝালাঙ্গী সীমান্তে গত বৃহস্পতিবার ২০ জনকে পুশইন করে। গ্রামবাসীরা টের পেয়ে বিজিবিকে জানালে বিজিবি তাদের আটক করে পাটগ্রাম থানায় জমা দেয়।
পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান জানান, পুশইন করা ২০ জনের বেশির ভাগ বাড়ি নড়াইল জেলার লোহগড়ায়। পরিবারের নিকট জমা দিয়েছে পুলিশ। এদের ১২ জন নারী, ২ জন পুরুষ ও ৬ জন শিশু। পুশইন করা নড়াইলের লোহাগড়ার মোহাম্মদ হোসাইন আলী মানবজমিনকে জানান, ভারতের গুজরাটে তাদের ধরে ভারতীয় পুলিশ। তাদের আদার কার্ড ও পরিচয়পত্র না থাকায় ধরে আনে। কয়েকদিন ধরে জড়ো করে রাখে বিভিন্ন ক্যাম্পে। সে আরও জানায়, সেখানে আরও পুশইন করার জন্য কয়েক হাজার মানুষ আটক করে। একই এলাকার পুশইন করা মুরাদ শেখ জানালেন, ভারতের জলপাইগুড়ির মেকলিগঞ্জ থানা মাঠে আশপাশ বাড়িতে বাংলাদেশিদের জড়ো করে পুলিশ। তারা সবাই দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে অবৈধভাবে যায়। তারা ভারতে কেউ ইটভাটা, কেউ বসতবাড়িতে কাজ করতো। ভারতীয় পুলিশ তাদের ধরে আনে। ওদিকে ওপারের একটি সূত্র জানিয়েছে, পুশইন করার জন্য ভারতের দিনহাটা, মাথাভাঙ্গা, সীতাই, তুফানগঞ্জ ও মেখলিগঞ্জ ছাড়াও জলপাইগুড়ি ও আলিপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশিদের রেখেছে বিএসএফ। পুশইন করা নড়াইলের ৭০ বছরের পান্না বেগম জানান, বাড়িতে অভিমান করে দালালকে ২ হাজার টাকা দিয়ে ভারতের গুজরাটে যায়। সেখাকে কাজ করে জীবন চালায়। ভারতের পুলিশ তাকে আটক করে। তিনি ছাড়াও অনেককে বিএসএফ ট্রাকে করে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করে। পরে পাটগ্রাম সীমান্তে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে অনেকের।
ওদিকে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির ব্যাটারিয়ন অধীন কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি বালারহাট সীমান্তে শনিবার ভোর রাতে ২৪ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী ইমাম জানান, বিএসএফ রাতের আঁধারে পুশইন করছে বাংলাদেশে। তবে বিজিবি সর্তক অবস্থায় রাখা হয়েছে সীমান্তে। শুধু বিজিবি না সীমান্তে গ্রামবাসীরাও নির্ঘুম রাত জেগে পুশইন ঠেকাচ্ছে। লালমনিরহাটের পাটগ্রামের, সীমান্তে গাটিয়ারভিটে, ঝালাংগী, ঝালাঙ্গী, শমসের নগর, বুড়িমারীসহ সকল সীমান্তে বিওপি ক্যাম্পর বিজিবি সদস্যকে রেডএলার্ট জারি করে। পুশইন ঠেকাতে সীমান্তের চন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, সীমান্তের গ্রামবাসীদের মাঝে পুশইন ঠেকাতে জনসতেনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে বিজিবি’র পাশাপাশি তারাও প্রস্তুত। লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন সীমান্তে আনসার সদস্যরাও কাজ করছে বিজিবির সাথে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার জানালেন, পুশইন ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি’র পাশাপাশি গ্রামবাসীদের সর্তক রা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, সীমান্তে থানাগুলোর পুলিশ সদস্যরাও রয়েছে সর্তক।