| ০৮ জুন ২০২৫

মোদিকে বিপাকে ফেললেন ট্রাম্প

রিপোর্টারের নামঃ ডেস্ক নিউজ
  • আপডেট টাইম : 16-05-2025 ইং
  • 28700 বার পঠিত
মোদিকে বিপাকে ফেললেন ট্রাম্প
ছবির ক্যাপশন: মোদিকে বিপাকে ফেললেন ট্রাম্প

ডেস্ক নিউজ: 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু যেভাবে তিনি ঘোষণাটি দিলেন, তা দেখে রীতিমতো চমকে উঠেছেন বেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। কারণ এ ঘোষণার মাত্র এক দিন আগেই ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘দুটি নিউক্লিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নাক গলাবে না। এটা কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার বিষয় নয়। কিন্তু মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু করল, তা এখনো স্পষ্ট নয়।’

এদিকে ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার আধঘণ্টার মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব একটি বিশেষ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের একজন সামরিক কর্মকর্তা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এতে উভয় পক্ষ আকাশপথ ও স্থলপথে গোলাগুলি বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, পুরো প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারত একবারও যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেনি। অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ট্রাম্পকে শুধু তার ‘যোগ্য নেতৃত্ব ও সক্রিয় ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকেও ধন্যবাদ দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখতে তারা অসামান্য ভূমিকা পালন করেছেন।’

নয়াদিল্লি যে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাটুকু পর্যন্ত স্বীকার করল না, এর পেছনে একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার আছে। তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতার ব্যাপারে দিল্লির বরাবরই আপত্তি ছিল। দিল্লি মনে করে, অন্য দেশের সঙ্গে তার নিজ দেশের কোনো সমস্যা হলে তা একান্তই দ্বিপক্ষীয় ব্যাপার। দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান দ্বিপক্ষীয়ভাবেই হতে হবে। স্বভাবতই, ট্রাম্প যে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কাশ্মীরের ব্যাপারে একটা সমাধানে পৌঁছার চেষ্টা করলেন, তা ভারতের জনগণ স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। ভারত অবশ্য এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার ব্যাপারটি স্বীকার করে কোনো অফিশিয়াল বক্তব্য দেয়নি।

ভারত কেন কাশ্মীরের ব্যাপারে তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতা মানতে নারাজ, তা বুঝতে হলে একটু ইতিহাস জানা দরকার। কাশ্মীরের সমস্যাকে শুধু ঔপনিবেশিক আমলের সীমানারেখা-সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হিসেবে দেখলে চলবে না। এটি শুধু একটি ভূখণ্ডের ওপর দুটি দেশের দাবির ব্যাপারও নয়। এই দ্বন্দ্বের উদ্ভব হয়েছে মূলত উভয় দেশের আদর্শিক পরিচয়ের প্রশ্ন থেকে। উভয় দেশই মনে করে, কাশ্মীর ছাড়া তাদের রাষ্ট্র অসম্পূর্ণ। তাই কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করার যেকোনো তৎপরতাকে দেশ দুটি তাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করে।

এসবকিছু সত্ত্বেও ভারতই প্রথমবারের মতো কাশ্মীর সমস্যাটিকে জাতিসংঘে উপস্থাপন করেছিল। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়া দফায় দফায় এ সমস্যা নিরসনের জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করে। ভারতের জনগণ মনে করে, এসব মধ্যস্থতার ঘটনায় ভারতের কোনো লাভ হয়নি, কিংবা হলেও তা খুব সামান্য। তখন থেকেই তাদের মনে ভয় ঢুকে গেছে, তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ভারতের পক্ষে যাবে না।

কিন্তু ১৯৭১ সালের যুদ্ধ এই চিত্র পাল্টে দেয়। তখন থেকে দর-কষাকষির টেবিলে ভারত বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই সিমলা চুক্তি করে ফেলতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে দিল্লি মনে করতে শুর করে, তার ও অপর একটি দেশের মাঝখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তৃতীয় কোনো শক্তির দরকার নেই। ২২ এপ্রিলের পেহেলগাম হামলার দায় পাকিস্তানের ওপরে চাপায় ভারত। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামাবাদও সিমলা চুক্তি বাতিল করে দেয়।

৭২ সালের পর থেকেই ভারত নিজেকে আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক শক্তিকে পুঁজি করে বিশ্বনেতাও হতে চায়। তাই মনে করে বিশ্বনেতা হিসেবে তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতা তার জন্য শোভা পায় না। তবুও দীর্ঘকাল ধরে বিশ্ব মঞ্চে ভারত-পাকিস্তান একই ধরনের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হতে থাকে। বহুদিন পর্যন্ত মাঝখানের এই হাইফেনটি থেকে মুক্ত হতে পারেনি ভারত। হতাশ ভারত ৯০ দশকজুড়ে ব্যাপারটি নিয়ে জোর প্রচেষ্টা চালায়। ‘ভারত-পাকিস্তান শব্দযুগল থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে।

ভারত এখন কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নিলে আবার ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে একই পাল্লায় মাপা শুরু হয়ে যেতে পারে। ফলে বৈশ্বিক পরিসরে মর্যাদা হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় রয়েছে ভারত। তবে সরাসরি না হলেও অতীতের বিভিন্ন সময় দেশ দুটি পরোক্ষভাবে তৃতীয় পক্ষের দ্বারস্থ হয়েছে। ৪৮ ও ৬৫ সালের দুটি যুদ্ধই হয়েছিল। উভয় যুদ্ধ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সক্রিয় প্রচেষ্টায় প্রশমিত হয়।

আবার ১৯৬৬ সালের তাসখন্দ ঘোষণার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এমন অনেক ডকুমেন্ট আছে, যা প্রমাণ করে দেশ দুটি বহুবার পর্দার আড়ালে তাদের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর দ্বারস্থ হয়েছিল। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসী আক্রমণ এবং ২০১৯ সালে বালাকোটে বিমান হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র আড়াল থেকে ভূমিকা পালন করেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে এই মধ্যস্থতার ঘটনাগুলো পরিকল্পনা করে ঘটেনি। সংকট মুহূর্তে যখন যতটুকু দরকার, ততটুকুই ঘটেছে।

২০২১ সালে ভারত-পাকিস্তান বর্ডারে গোলাগুলি বন্ধে দূতিয়ালি করেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেবারই তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট ছিল।

তখন পাকিস্তান ও আরব আমিরাত মধ্যস্থতার কথা স্বীকার করেছিল কিন্তু ভারত অফিশিয়ালি কিছুই বলেনি। এদিকে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না, সে বিষয়েও আজ পর্যন্ত মুখ খোলেনি দিল্লি।

প্রকাশ করতে না চাইলেও এসব উদাহরণ প্রমাণ করে, সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নিতে রাজি আছে দিল্লি। তবে নয়াদিল্লি যদি এবারের মধ্যস্থতার কথা স্বীকার করেই ফেলে, তাহলে একদম নিশ্চিত হয়ে যাবে, ভারত এখন খোলাখুলিভাবে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা মেনে নিচ্ছে।

এটা নিশ্চিত যে নয়াদিল্লি এখন একটা সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন মধ্যস্থতা ভবিষ্যৎ সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে একটা পথ খুলে দিল বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। অথচ এখন পর্যন্ত এই প্রচারণার বিরুদ্ধে কিছুই বলেনি ভারত। তবে যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে মার্কিন ভূমিকা ভারতের জনগণ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। অনেকের প্রশ্ন, ভারত কারো সঙ্গে সংঘর্ষ স্থগিত করবে, নাকি চালিয়ে যাবে, তার ঘোষণা অন্য একটি রাষ্ট্র কীভাবে দিতে পারে? মোদিকে অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে হবে।


দ্য ইন্টারপ্রেটার থেকে ভাষান্তর 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ Gen Z Bangladesh Online - জেন জি বাংলাদেশ অনলাইন | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ